প্রকাশিত: Sat, Apr 20, 2024 11:40 AM
আপডেট: Sun, Dec 7, 2025 12:53 AM

অনেকেই তৈরি হচ্ছেন, ইরান-ইসরায়েল অজুহাতে আর কীসের দাম বাড়ানো যায়!

কাজী এম. মুর্শেদ : জিনিসপত্রের দাম নিয়ে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এখন কেউ কিছু আর লিখছে না। মানুষ বিকল্প বেছে নিয়েছে। খরচ কমানো। বিদ্যুতের সমস্যা বাড়ছে। আজকাল সেটাও অভ্যাস হয়ে গেছে। মিয়ানমার ইস্যুও গা সওয়া হয়ে গেছে। মানুষ সম্ভবত আর কোনো প্রেসনোট পড়ে না। পড়লেও বিশ্বাস করে না। ৩৪টা টিভি চ্যানেলে যতো মিয়ানমার, কুকিচিন বা অন্যান্য বিষয় নিয়ে মহাজ্ঞানীদের আলোচনা হয়, সারা বাংলাদেশের মানুষ ততো কথা বলে না। কাজের খাতিরে অনেক ধরনের লোকজনের সাথে কথা বলতে হয়। কারো কোনো কথার বিষয়ে পণ্যমূল্য, বিদ্যুৎ বা কুকিচিন কোনো ইস্যুই নয়। একটা সময় লোডশেডিংয়ে অভ্যস্ত হয়ে যাই, মানুষ তেমনি অভ্যস্ত। 

এরচেয়ে বেশি কথা হয় কালবৈশাখী বা নি¤œচাপ নিয়ে, সেইসাথে এই আবহাওয়া পরিবর্তনে জ্বর উঠছে, সেই বেশি চিন্তার ব্যাপার। এই ফ্লুটা বেশ খারাপ ধরনের, শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ওঠে যায়, খাবার অরুচি ও বমি ভাব। এবারের এই জ্বরটা একটু আলাদা, শুধু কম বয়সী না, যাদের ইম্যুনিটি যথেষ্ট ভালো, তারাও ভুগছে। জিনিসপত্রের দাম ওঠানামা, আমদানি, এসব নিয়ে যে হাতে গোনা কয়েকটা গ্রæপ অফ কোম্পানি বাজার মূল্য নির্ধারণ করে, সেটা সবার কম বেশি জানা। এর আগে কোভিড গেম খেলা হয়েছিলো, মাঝে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ একটা বড় ট্রাম্প কার্ড ছিলো, যদিও বাংলাদেশের আমদানিতে গম আর তুলা ছাড়া ইউক্রেন ইস্যু কোনো সমস্যা ছিলো না। 

আর এখন বিভিন্ন ব্যবসায়ী যারা আমদানির সাথে সম্পৃক্ত, তাদের এখন বিভিন্ন ক্লাবে চিয়ার্স চলছে। কারণ ইরান-ইসরায়েল। ইসরায়েলের দামেস্কে ইরান দূতাবাসে বোমা হামলার জবাব দিয়েছে ইরান। ঘটনা এ পর্যন্ত হলে হতো। সামনে অনেকে আশা করছে আরেকটু বাঁধুক। যেখানে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সরাসরি বলে দিয়েছেন, তারা ইসরাইলের পুনঃ হামলায় সমর্থন দেবে না, সেখানে বাংলাদেশের অলিগার্করা আশায় আছেন আরেকটু লম্বা হলে ভালো হয়। কারণটা সহজ। শিল্পসহ সবক্ষেত্রে মূল একক শক্তি তেল। আমাদের তেল ও এলএনজির মূল রপ্তানিকারক কুয়েত। সেখানে যদি গাল্ফের হরমুজ প্রণালী ইরান আটকে দেয়, তেলের জন্য বিরাট সমস্যা শুরু হবে। তেল ছাড়া অনেক প্রোডাকশন বন্ধ হবে, শিল্প বন্ধ হবে, লোকজন বেকার হবে, রপ্তানি বাধা পাবে। তাতে থ্যাংক ইউ ইসরায়েল ও ইরান বলে কয়েক দফা দাম বাড়ানো যাবে। 

বিশ্বরাজনীতি আমার জানার কথা না, দাবিও করি না। এটা টকশো করাদের কাজ। আমি কিছুটা প্রাথমিক ক্লাসের অর্থনীতি বুঝি। আমি যা বুঝি, সামাজিক মাধ্যমে লিখে কোনো লাভ নেই, কেউ পড়েও না। অবশ্য একদম পড়ে না তাও না, তারা মূলত বটবাহিনী যারা বিভিন্ন লেখায় রিপোর্ট করে রিচ কমায়, কমেন্ট করে আক্রমণ করে, কারো কারো লেখা লিখিত নালিশ করে। ফলাফল, কিছু লোকের পেছনে ছায়া তদন্ত চালু হয়, সরকারি সামাজিক মাধ্যম লাইব্রেরীতে বিভিন্নজনের নামে ফাইল খোলা হয়। কিছু লোক পয়সার জন্য যে কাজ করে, আমার জানা নাই, অন্য মানুষের ক্ষতি করে যা আয় করে, সেটা হালাল উপার্জন কিনা, সেই উপার্জন দিয়ে সংসার চালায়, ছোট বাচ্চার দুধ কিনে পিতা মাতা হিসেবে গর্ব করে। 

এই চিয়ার্স পুরো আমার কাল্পনিক, তবে এটা খুব ভুলও না। অনেকেই তৈরি হচ্ছেন ইরান-ইসরাইল এই অজুহাতে আর কীসের দাম বাড়ানো যায়। তারা অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করছেন চীন-তাইওয়ান কিছু হলে বেশ ভালো ব্যবসা হবে। অন্তত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় কিছু একটা হলেই হয়। ভানুর কথায় লোডশেডিংয়ে মানুষ যেমন অভ্যস্ত হয়ে যায়, তেমনি এই দাম বৃদ্ধিতে মানুষের ইমিউনিটি চলে আসছে। আজকাল তেমন লেখার ইচ্ছা হয় না, সামাজিক মাধ্যমে লিখে এই বট বাহিনীর সংসার চালানোর অংশীদার হতে চাই না। ইরান ইসরায়েল যদি কোনো সংঘর্ষ হয়, ইসরায়েলের পেছনে পশ্চিমা শক্তি আসবে, তেমনি ইরানের পিছনে রাশিয়া ও চীন হয়তো থাকবে। শেষ পর্যন্ত কী হবে সেটা ধারণা করতে না পারলেও খাতুনগঞ্জ, মৌলভীবাজার আর কারওয়ানবাজারের আড়তে দামের আগুন লাগবে। ভয়ের কিছু নেই, আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ, আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। দরকার হলে খরচ আরো কমবে, কিন্তু এই চিয়ার্স পার্টিকে জিততে দেবো না। তবে বটপার্টি টিকে থাকবে যেন আপনি কথা লিখতে বা বলতে না পারেন। লেখক: অর্থনীতি বিশ্লেষক